ডেস্ক রিপোর্ট :
দেশের সকল পর্যটন স্পট খুলে গেলেও এখনো বন্ধ রয়েছে পাহাড়ী পর্যটন জেলা বান্দরবানের পর্যটন স্পটগুলো। এতে হতাশ হয়ে পড়েছেন পর্যটন সংশ্লিষ্ট খাতে জড়িতরা। আর্থিকভাবে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়ে দেউলিয়া হওয়ার পথে রয়েছে পর্যটন সংশ্লিষ্ট অসংখ্য ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। চাকুরী হারিয়েছে পর্যটন সংশ্লিষ্ট পর্যটন স্পট, পরিবহণ, হোটেল-মোটেল ও রেষ্টুরেন্ট গুলোর প্রায় ৬০% কর্মকর্তা-কর্মচারী। তবে শীঘ্রই পর্যটন খাতে আরোপিত নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হবে বলে আশার বাণীর দিলেন জেলা প্রশাসন।
জানা গেছে, করোনায় বিরূপ প্রভাব পড়েছে পাহাড়ের সর্বত্র। পাল্টে গেছে পাহাড়ে মানুষের জীবন ধারা। আর্থিক মন্দা দেখা দিয়েছে ব্যবসা বাণিজ্যের উপর। আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক, হস্তশিল্প ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। বিশেষ করে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে পাহাড়ী পর্যটন জেলা বান্দরবানের পর্যটন সংশ্লিষ্টরা। কক্সবাজার, কোয়াকাটা, সিলেট, চট্টগ্রামসহ দেশের অন্য সব পর্যটন স্পট খুলে দেয়া হয়েছে। খুলে দেয়া হয়েছে পাশ্ববর্তী জেলা রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ির পর্যটন শিল্পের সংশ্লিষ্ট সবকিছু। কিন্তু এখনো বন্ধ রয়েছে বান্দরবানের সকল পর্যটন স্পট। এতে হতাশা বিরাজ করছে বান্দরবানের পর্যটন সংশ্লিষ্ট খাতে জড়িতদের মধ্যে।
প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, করোনা ভাইরাসের সংক্রমন প্রতিরোধে গত ২৬শে মার্চ থেকে জেলা প্রশাসন সকল পর্যটন স্পটগুলো বন্ধ ঘোষনা করে এবং জেলায় পর্যটকের প্রবেশের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। যা আজও বলবত রয়েছে। দীর্ঘ পাঁচ মাস ধরে বন্ধ রয়েছে জেলার সকল পর্যটন স্পট হোটেল-মোটেল ও রেষ্টুরেন্টগুলো।তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত ৫মাসে শুধু বান্দরবানে পর্যটন খাতে পর্যটন স্পট, পরিবহণ, হোটেল-মোটেল, রেষ্টুরেন্টগুলোর আর্থিক ক্ষতি হয়েছে প্রায় ২০০কোটি টাকা। গত ৫মাসে চাকুরী হারিয়েছেন পর্যটন স্পট, পরিবহণ, হোটেল-মোটেল ও রেষ্টুরেন্টগুলোর ৬০% কর্মকর্তা-কর্মচারী।পর্যটন সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বান্দরবান জেলা শহরে বড়, মাঝারি, ছোট মিলে ৬০টি হোটেল-মোটেল রয়েছে। এসব হোটেল-মোটেল ৮০০কর্মচারী রয়েছে।বান্দরবান হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির সভাপতি মোঃ সিরাজুল ইসলাম জানিয়েছেন, গত ৫মাস যাবত বান্দরবানের হোটেল-মোটেল মালিকদের আর্থিকভাবে প্রায় ১০৫কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। ৬০টি হোটেল-মোটেলে ৮থশ কর্মচারী কর্মরত ছিল। আর্থিক সংকটের কারণে মালিকেরা ৩২০জন কর্মচারীকে ছাঁটায় করতে বাধ্য হয়েছে। যা ৪০% এর কাছাকাছি। তিনি বলেন, অনেক হোটেল-মোটেল মালিক পথে বসে গেছে। তিনি সহজ শর্তে ঋণ দিয়ে পর্যটন ব্যবস্থা আগের মত স্বাভাবিক করতে সরকারের প্রতি অনুরোধ করেন। এছাড়াও তিনি দ্রুত নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে প্রশাসনের জোর আহবান জানিয়েছেন।
এদিকে পর্যটন শিল্পকে কেন্দ্রে করে বান্দরবান শহরে গড়ে উঠেছে ৫০টি খাবার দোকান ও রেষ্টুরেন্ট। যার কর্মচারী ৫০০জন। দোকান ও রেষ্টুরেন্ট মালিকেরা জানান, করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধ নিষেধাজ্ঞার কারণে গত ৫মাস ধরে বন্ধ থাকায় প্রায় ৩৫ থেকে ৪০কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। বান্দরবান রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির যুগ্ন সম্পাদক মোঃ রফিকুল আলম জানান, করোনায় বন্ধ থাকার কারণে খাবার দোকান ও রেষ্টুরেন্ট কর্মচারীরা বেকার হয়ে পড়েছে। ৫মাস পর বর্তমানে প্রশাসন খাবার দোকান ও রেষ্টুরেন্টগুলো খুলে দিলেও পর্যটক না আসায় তেমন বেচা-বিক্রি খুবই কম। মালিকেরা চার ভাগের মধ্যে মাত্র একভাগ কর্মচারী দিয়ে তাদের দোকান ও রেষ্টুরেন্টগুলো টিকিয়ে রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। হতাশার সাথে একই রকম কথা বলেন পরিবহণ মালিক, চালকেরা। তারা জানান, পর্যটন সংশ্লিষ্ট বান্দরবান শহরে ৩৩০টি গাড়ি রয়েছে। যার শ্রমিক ৬৬০জন। পর্যটন স্পটগুলো বন্ধ থাকায় তাদের ও গাড়িগুলো অলস বসে আছে। চালক-হেলপাররাও বেকার হয়ে খুবই কষ্টের মধ্যে দিনাতিপাত করছে। বান্দরবান শহরের পর্যটন সংশ্লিষ্ট গাড়ি চালক পলাশ জানান, প্রতিমাসে গাড়ি চালিয়ে মালিকের টাকা, খরচ বাদে তার নূন্যতম আয় হত ২৫হাজার টাকা। তবে পর্যটন ভরা মৌসুমে তার দ্বিগুন আয় হত। করোনাকালে সবকিছু বন্ধ থাকার কারণে হাতে যা অর্থ ছিল, তা সব শেষ হয়ে গেছে আরো অনেক আগেই। বর্তমানে সে দারদেনায় জর্জরিত।
এব্যাপারে বান্দরবান জেলা প্রশাসক মোঃ দাউদুল ইসলাম মহাদয় জানান, পর্যটনের উপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার বিষয়ে আলোচনা চলছে। আগামী ১৯আগস্ট করোনা প্রতিরোধ কমিটির বৈঠকের সকলের মতামতের ভিত্তিতে ও স্বাস্থ্যবিধি জারি করে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়ে পর্যটন স্পটগুলো খুলে দেয়াসহ পর্যটকদের প্রবেশের অনুমতির বিষয়ে চিন্তাভাবনা চলছে।
Leave a Reply